Arijit’s Bengali Poetry Book- কবিতার খাতা Arijit Banik
-
- Arts
-
This podcast is all about collection of Bengali Poetry recitals by Arijit Banik.
আমার কবিতার খাতায় যাঁদের কবিতা রয়েছে, সেগুলো আপনাদের শোনাচ্ছি💙❤️
-
তোমাকে একটি চিঠি
লালসাংলিয়ানি রালতে
(মিজোরাম)
তোমাকে একটি চিঠি
আমি তোমাকে নিয়ে একটি কবিতা লিখতে চেয়েছিলাম। যে তুমি,
আমার দীর্ঘদিনের আবেগ। আমি বসলাম
জানালার ধারে আমার ডেস্কটায়, যেখান থেকে দেখা যায়
তারাভরা রাত কত সুন্দর । আমার মনে পড়ছে,
তুমিও বসেছিলে আমার পাশেই, নিঃশব্দে, যেন ব্যাঘাত না ঘটে
আমার লেখায় ।
আমি চেষ্টা করলাম, আমার প্রথম পংক্তিটি লিখতে, চেষ্টা করলাম
আমার অনুভূতিকে শব্দে আঁকতে। কাব্যের ছন্দে আমি চাইলাম
তোমাকে বলতে, কিভাবে আমি তোমার মধ্যে খুঁজে পেয়েছি নিজেকে। তুমি,
কতটা মূল্যবান আমার কাছে; আমার বাতাস, আমার জল
আমার সূর্য ।
আমার হাত কাঁপতে লাগলো যখন আমি তোমার নাম লিখলাম। আমি
চাইছিলাম তোমার নামটাই আমার কবিতার প্রথম শব্দ হোক, আমার কবিতা
তোমার জন্য। কিন্তু আমার মনের সে গভীর ভাবনা আমি পারলাম না
ফুটিয়ে তুলতে কাব্যে। তোমার নামের পরে আমি আর লিখতে পারলাম না কিছুই।
এটা কাল রাতের কথা । আজ সকালে আমি বসে আছি সেই একই ডেস্কে।
এখন সাতটা। এবং আমি এইমাত্র আমার লাল চা শেষ করলাম। আমি ভাবছি,
যদি তুমি এখন এখানে থাকতে, কত সুখী, কত তৃপ্ত হতাম আমরা ।
এখন, এই চিঠিটা আমি তোমার কবরের ওপর রেখে আসব ।
একটা লাল গোলাপের সাথে।
পুনশ্চ – আমার জানালায় এখনও একটা ছোট্ট কালো পতাকা লাগানো আছে।
অনুবাদ : কাকলি গঙ্গোপাধ্যায়
৮৭ -
Je telephone asar kotha I Purnendu Potri
যে টেলিফোন আসার কথা
-
Tomar jonno bhabi na | Nirendranath Chakraborty | তোমার জন্য ভাবি না । নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
তোমার জন্য ভাবি না
তুমি তোমার ছেলেকে
অহোরাত্রি অসংখ্য মিথ্যার বিষ গিলিয়েছ।
শৈশবে সে হাসেনি,
কেননা
সমবয়সীদের সে শত্রু বলে জানত।
যৌবনে সে নারীকে ভালবাসেনি,
কেননা
নারীকে সে নরক বলে জানে।
ধীরে-ধীরে সেই অকালবার্ধক্যের দিকে সে এখন
এগিয়ে যাচ্ছে,
চুলগুলিকে যা সাদা করে দেয়,
কিন্তু
চিত্তের মালিন্য যা মোচন করতে পারে না ।
তোমার জন্য আমার কোনো ভাবনা নেই,
কিন্তু
তোমার ছেলের জন্য আমার বড় দুঃখ হয়।
তুমি তোমার মেয়েকে
অহোরাত্রি অসংখ্য কুৎসার কালি
গিলিয়েছ।
শৈশবে সে ফুল কুড়ায়নি,
কেননা সে শুনেছিল
প্রত্যেকটা গাছেই আছে একানড়ের বাসা।
যৌবনে তার জানলা দিয়ে বাতাস বয়ে যায়নি,
কেননা
প্রতিবেশীর পুত্রকে সে লম্পট বলে জানে।
ধীরে-ধীরে সে এখন সেইদিকে এগিয়ে যাচ্ছে,
যেখানে
দুপুরগুলি বিকেলের মতো বিষণ্ণ আর
বিকেলগুলি রাত্রির মতো অন্ধকার।
তোমার জন্য আমার কোনো ভাবনা নেই,
কিন্তু
তোমার মেয়ের জন্য আমার বড় দুঃখ হয়। -
Mone Koro I Swapnil Chakraborty
মনে করো আমরা এখন পাহাড়ে,
অথবা সমুদ্রে।
মনে করো একটা গোটা সিনেমাহল শুধু আমাদের জন্য, অথবা পার্কের সব বেঞ্চ ফাঁকা
-যেমনটা চাও।
মনে করো আমাদের বিয়েতে কেউ উপহার দিয়ে গেছে প্যারিসের প্লেনের টিকিট,
তোমার আলমারিতে শাড়ির কালেকশন দেখে মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে গেছে তোমার হিংসুটে বান্ধবীর দল।
মনে করো আমার অফিসে অনেক কাজ,অনেক বড় চাকরি করি,সন্ধ্যেবেলা গাড়ি কিনতে যাবো একসাথে-একথা তুমি প্রতিবেশি বৌদিকে বলছো।
মনে করতে পারো বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে যাচ্ছি,সে কি ঠিকমতো নিজের নামের অর্থ বলতে পারবে? এ নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত।
মনে করো এইমাত্র যার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হলো সেও ঠিক আমার মতোই অপ্রস্তুত,বেহায়া,বিষণ্ণ কোনো বেকার।
প্রেমিকার বিয়েতে নির্লজ্জের মতো নেমন্তন্ন খেয়ে ওয়েটারকে দশটা টাকাও বখশিশ দেবে না।
মনে করো আমি কেউ না,কিছুই না,কখনো কোথাও ছিলাম না।
মনে করো
©️স্বপ্নীল চক্রবর্ত্তী -
মানুষ বড় অভিমানী প্রাণী । সাদাত হোসাইন ।
মানুষ বড় অভিমানী প্রাণী
-সাদাত হোসাইন
(উচ্চারন - অরিজিৎ বনিক)
মানুষ বড় অভিমানী প্রাণী ।
সে চায়, তার মন খারাপ হলে প্রিয় মানুষটাকে না বললেও সে বুঝে ফেলুক।
ফোন করে খানিক ম্লান গলায় ‘হ্যালো' বলতেই ওপারের মানুষটা বলুক,
‘তোমার মন খারাপ ?'
তার এলোমেলো চুল, খানিকটা লাল চোখ দেখে বলুক, ‘তোমার ঘুম হয় নি
টেনশন করছ কিছু নিয়ে ?'
রাতে ? দুঃস্বপ্ন দেখছ ? টেনশন করছ কিছু নিয়ে ?'
সে চায়, মানুষটা বুঝুক কখন শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরতে হয়,
চোখের সামনে আলতো করে হাত ছুঁইয়ে বন্ধ করে দিতে হয় চোখের পাতা।
সে চায়, মানুষটা বুঝুক কখন হাতের মুঠোয় হাত রাখতে হয়, ফিসফিসিয়ে
বলতে হয়, ‘আমি তো আছিই। তবে মন খারাপ কেন ?')
সে চায়, মাঝরাত্তিরে সে টের পাক, পাশের মানুষটা তার মাথার নিচের সরে
যাওয়া বালিশটা ঠিক করে দিচ্ছে। শেষরাতে যখন খানিক হিম নামে, তখন
জড়িয়ে দিচ্ছে ওম চাদরে ।
সে চায়, তার জন্য মাঝরাত্তিরেও কেউ বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় থাকুক । মনে
রাখুক তার জন্মদিনের কথা, প্রথম দিনের কথা, স্পর্শ ও অনুভূতির কথা।
সে চায়, তাকে ছুঁয়ে দেখতে গিয়ে কেউ মিথ্যেমিথ্যি অজুহাত বানাক। কেউ
কপাল ছুঁয়ে বলুক, ‘দেখি, দেখি, তোমার জ্বর নয় তো ?'
অভিমানে দূরে সরে যেতে চাইতেই কেউ বলুক, ‘খানিক ভুল করেছি বলেই
দূরে সরে যেতে হবে ? তবে এই যে এত ভালোবাসি, তাতে আরও কাছে
আসা যায় না ? আরও আরও কাছে ? অনেক অনেক কাছে ?'
মানুষ বড় অভিমানী প্রাণী ।
তারা দুজনই কেবল ভাবে, এসবই ওই মানুষটা করুক। ওই অন্য মানুষটা।
কিন্তু শেষমেশ করা হয় না কারোই। তাই কাছে আসার রঙিন দিনেরা
ক্রমাগত দূরে যাওয়ার ধূসর, বিবর্ণ গল্প হয়।
মানুষ বড্ড অভিমানী প্রাণী ।
অভিমানে সে ক্রমশই দূরে চলে যায়,
বুকে পুষে রাখে এক সমুদ্র আক্ষেপ । -
এই সিঁড়িতে পথ নেই আমার । সাদাত হোসাইন
উচ্চারন - অরিজিৎ বনিক
এই সিঁড়িতে পথ নেই নামার
এই যে অসংখ্য মানুষ ফেলে আমি চলে আসি তোমার কাছে,
অজস্র পথ রেখে চলে আসি তোমার পথে,
এই যে জগতের সব প্রাপ্তি উপেক্ষা করেও আমি অপেক্ষায় থাকি তোমার,
তুমি কি তা বুঝতে পারো ?
এই যে জলের মতন আমার বুকেও ছলাৎছলাৎ শব্দ হয়,
এই যে মেঘের মতো আমার বুকেও বিষাদ জমে,
এই যে বৃষ্টির মতো আমার চোখেও কান্না হয়,
তুমি কি তা বুঝতে পারো ?
এই যে অগণন ঠিকানা রেখেও আমি চিঠি লিখে যাই তোমার ঠিকানায়,
অগুনতি আনন্দ ফেলেও আমি দুঃখ পেতে যাই তোমার কাছে,
এই যে অসীম আকাশ ফেলেও আমি বন্দি হতে চাই তোমার খাঁচায়,
তুমি কি তা বুঝতে পারো ?
জানি পারো না! তাতে দুঃখ নেই আমার ।
কারণ, ভালোবাসা কিংবা দুঃখ তো জানেই, এ সিঁড়িতে পথ নেই নামার!