সম্পর্কে কে বড় মা নাকি বউ | কলমে : দোলনা বড়ুয়া তৃষা | কন্ঠে : পার মিতা | পারমিতার কবিতা Paromita Pramanick

#paromita #paromitar_kobita
মা, নীলা, তোমাদের দুইজনের থেকে কোন একজন কে বেছে নেওয়ার অধিকার আমার নেই, সে অধিকার আমি হারিয়ে ফেলেছি। কিভাবে তা বলছি। এখন সে অধিকার তোমাদের কে আমায় বেছে নিবে? তার আগে আমার কিছু কথা আছে।
মা প্রথমে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তুমি ঘরে একটা মেয়ে চেয়েছিলে। কিন্তু তাকে ঘরের বউ থেকে মেয়ে বানিয়ে তোমায় দিতে পারলাম না।
আমি নীলাকে সাহায্য করে নি তোমায় বুঝার জন্য। আমি ওকে বলি নি, তুমি যখন বলো সন্ধ্যায় চুল খোলা রেখো না, তুমি ওকে খোটা নয়, তুমি ওকে শেখাচ্ছো।
আমি ওকে বুঝায় নি, মা তুমি চেষ্টা করেছিলে কিন্তু, বাবা কোন কাজে তোমায় সাহায্য করে নি। আমি তোমার সাত রাজার ধন তাই তুমি এসব আমায় করাও নি। এইটা আমাদের নিয়ম। তার মানে এই না যে বাবা কখনো তার দায়িত্ব অবহেলা করেছে।
তুমি যখন সেদিন নীলা বড় মাছের পিস টা নিয়েছিল তখন তুমি বললে পলাশ বড় মাছের পিস টা খায়। নীলা আবার রাখতে গেলে বলেছিলে, খাও খাও, এটো হাতে আর রেখো না৷ সেদিন নীলার কান্নাটা বুঝে আমি ওকে বুঝাই নি তুমি কত বার আমায় মেরেছিলে এটো হাতে কিছু রাখতে গেলে।
সারাদিন শেষে বাসায় এলে তখন যে তুমিই ছিলে আমার সকল কথার ঝুরি, সব ছিলো তোমার জানা। আমিই ছিলাম তোমার একমাত্র জানালা৷ সরি মা। আমি তা করি নি।
নীলা আমি তোমার কাছে অপরাধী। তুমি আমায় ক্ষমা করো কারণ আমি তোমার প্রথমে ছোট ছোট মন খারাপ গুলো শুনি নি। শিখিয়ে দিই নি, কিভাবে তোমাকে আর এইসব কথা শুনতে হবে না। কি করলে মা উচ্চস্বরে হেসে উঠে। কোন খাবার টা খেয়ে বাবা পুরানোর কথার বাক্স খুলে। তোমার ছোট ছোট ভুল গুলো অপরাধ হওয়ার আগে নিজের বলে তোমাকে বাঁচিয়ে দিই নি।
আমি তোমার আর মায়ের সর্ম্পক টা কখনো স্বাভাবিক করার চেষ্টা করি নি। যেখানে তোমার খারাপ লাগলে তুমি মাকে বলতে পারো নি, - মা আমার শরীর টা খারাপ লাগছে, আপনি এইটা করেন তো প্লিজ৷
কি সহজ ব্যাপারটা তোমাদের মনের দূরত্ব এত জটিল করে তুলেছে যে, সেদিনের আকাশের থালা ধোয়াতে মায়ের চিৎকার করাটা কত স্বাভাবিক ছিলো আর তোমার চুপ থেকে আবার তা করতে থাকার নীরবতায় কত রাগ অভিমানের গভীরতা ছিলো আমি বুঝতেই পারি নি।
তাই আমি তোমাদের অপরাধী।
এখন মা তুমি যদি বলো আমি তোর জন্য সব বির্সজন দিয়ে এত বড় করেছি, তুই বউ ছেড়ে দেয়, আমি ছেড়ে দিবো মা। কিন্তু আমাকে তুমি আর সংসারী করতে পারবে না। কারণ তোমার পছন্দের সর্বগুনে সম্পন্ন মেয়ে যখন এই সংসার ছাড়তে হবে তখন আমি আবার কোন সর্বগুন সম্পন্ন নীলা এনে অর্কম্মা বানাতে পারবো না। আমাকে দিয়ে হবে না।
নীলা তুমি যদি বলো তুমি আমার বিয়ে করা বউ। আমাদের বাচ্চা আছে। তোমার আইনি অধিকার আছে আমার উপর। আমাকে তোমার সাথে যেতে হবে। আমি বাধ্য। কিন্তু আমার কাছ থেকে তুমি কোন দায়িত্বের আশা রাখতে পারবে না। কারণ যে ছেলে মা বাবা একা ফেলে যাবে তার কাছে তুমি কোন মূল্যবোধ আশা রাখতে পারো না।
এখন তোমরা বলো আমাকে কিভাবে ভাগ করতে চাও? আমার মুখের হাসি বুকের শান্তি টা নীলার সাথে বিদায় করে আমায় রাখতে চাও? নাকি নীলা আমায় সারাজীবনের আত্মগ্লানি নিয়ে মাথা নুয়ে জীবন্ত মূর্তি বানিয়ে নিয়ে যেতে চাও।
কেন আমাকে বলা হচ্ছে মা নাকি বউ? কেন মা আর বউয়ের মাঝে অপশন থাকবে? যখন মা আর বউ ছাড়া অপূর্ণ সব। কেন ওদের মাঝে, নাকি, শব্দ টা আসবে? তোমরা বলো কিভাবে ভাগ করবো এই ভগ্নাংশ?
একটানা কথা গুলো বলে আমি ক্লান্ত হয়ে গেলাম। অনেক ক্ষন নীরবতা। সবার চোখে জল গড়িয়ে একাকার। কোথায় যেন সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বেলেছে ধুপের সুভাস আসছে। কিছুক্ষন পর মা গলা খেকিয়ে বলল-
-তোমার মামা চলে যাবে তো, একটু আদা চা কর আর ময়দা বেলে কিছু লুচি বানাও। পারবে তো?
নীলা চোখের পানি মুছতে মুছতে হেসে বলল- - এখন করে আনছি মা,
উড়ন্ত বেলুন কে হঠাৎ ফুটো করে দিলে যেমন টা করে ফুস করে মাটিতে পড়বে, আমি তেমন করে বসে পড়লাম মায়ের পায়ের কাছে। মায়ের কোলে মাথা রেখে এতক্ষনে টালমাতাল শরীরটা সামলাচ্ছি। মা চুলে হাত বুলিয়ে বলছে, যা অফিসের কাপড় ছেড়ে আয়।
আমি রান্না ঘরে গেলাম। নীলা লুচি বেলছে। আমি গিয়ে ঝাপটে ধরলাম ওকে বুকে। কারো মুখে কথা নেই। কিন্তু আমার বুক টা, যেন গরম কোন তাওয়ায় এক টুকরো বরফ ছাড়লো কেউ, ছেত ছেত আওয়াজ করে গলে যাচ্ছে সবটা। আর একটু পরে সব গলে পানি হয়ে গেল সব জমানো কষ্ট গুলো। এখন যেন অনেক দিনের অব্যবহৃত পুকুরের শান্ত জল কোন।
Информация
- Подкаст
- Опубликовано4 октября 2020 г. в 01:35 UTC
- Длительность17 мин.
- Выпуск2
- ОграниченияБез ненормативной лексики